
গত বছর ফেসবুকে পরীক্ষামূলক চালু করা হয় ভয়ঙ্কর সায়েন্স ফিকশননির্ভর সমর গেম ক্রোনোব্লেড। গ্র্যান্ড থেফট অটো গেমের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনওয়ে তাদের নতুন এ গেম নিয়ে ব্যাপক আশাবাদী। কোম্পানিটির চিফ ক্রিয়েটিভ অফিসার ডেভ জোনস বলেন, এ ধরনের একটি গেম ফেসবুকে খেলতে পেরে হতবাক হয়ে যাবেন গ্রাহকরা।
অবশ্য ফেসবুকে এ ধরনের গেমের যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। জোনস জানান, সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী এবং অংশীদারদের কয়েকজন এ ধরনের গেমের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ফেসবুকের গ্রাহকরা ফার্মভিল এবং অন্যান্য স্বল্পমাত্রার গ্রাফিক্সের গেম খেলেই অভ্যস্ত। এসব গেম খেলতে সময়ও তুলনামূলক কম লাগে। অন্য বিনিয়োগকারীরা জানতে চেয়েছেন, কীভাবে এ ধরনের উচ্চ গ্রাফিক্সের গেম দিয়ে গ্রাহক আকর্ষণ করা হবে এবং কীভাবে রাজস্ব আসবে।
ফেসবুক অবশ্য এনওয়েসহ অন্যান্য এ ধরনের গেম নির্মাতার ওপর বেশ ভরসা রাখছে। কোম্পানিটির আশা, মাইক্রোসফটের এক্সবক্স কিংবা সনির প্লেস্টেশনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে বিশ্বের শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগ সাইটটি।
চলতি বছরই উচ্চ গ্রাফিক্স এবং মানের ১০ গেম সাইটে চালুু করবে ফেসবুক। মূলত পাড় গেমারদের আকৃষ্ট করাই এই গেমগুলোর লক্ষ্য।
গত বছর থেকেই এ পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে ফেসবুক। তবে চলতি বছরে এসে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। সাইটটির লক্ষ্য, গেমের মাধ্যমে অধিক গ্রাহক আকৃষ্ট করার পাশাপাশি ফেসবুক ব্যবহারের সময় বাড়ানো। এতে ফেসবুকের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। আবার গেম থেকে প্রাপ্ত আয়েও ভাগ বসাতে পারবে কোম্পানিটি।
অবশ্য ফেসবুকের এ পরিকল্পনা নিয়ে বেশ বিপাকে মার্কিন প্রশাসন। কর্তৃপক্ষের মতে, বন্দুক সহিংসতা বৃদ্ধির এ সময়ে ফেসবুকের অ্যাকশননির্ভর গেমগুলো খুব একটা ইতিবাচক হবে না। ফেসবুককে এ ধরনের গেমের বিষয়বস্তু বিবেচনা করতে আলোচনাও করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ফেসবুক জানায়, হার্ডকোর গেমগুলোর খেলোয়াড়দের বয়স ১৮ থেকে ৩০-এর মধ্যে। এবং তাদের বেশির ভাগই পুরুষ। ফার্স্টপারসন শুটার ঘরানার দ্রুতগতির গেমগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষতা অর্জনে প্রচুর সময় ব্যয় করে এই বয়সীরা। এ সময়টাকেই নিজেদের কাজে লাগাতে চাইছে কোম্পানিটি।
ফেসবুকের গেম পার্টনারশিপ বিভাগের প্রধান শন রায়ান বলেন, আগামী দুই প্রান্তিকের মধ্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একগাদা গেম আসছে। আর তাতে ফেসবুক গেম সম্পর্কে মানুষের ধারণা একেবারেই বদলে যাবে।
তিনি জানান, প্রচলিত ক্যাজুয়াল গেমগুলোর পাশাপাশি ফার্স্টপারসন শুটার, মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন, রিয়েলটাইম স্ট্র্যাটেজির মতো হার্ডকোর গেমগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে ফেসবুকে।
জোনস জানান, হার্ডকোর গেমাররা যেভাবে অনলাইনে প্রতিক্রিয়া দেখান কিংবা এক্সবক্স লাইভে মাল্টিপ্লেয়ার মোডে দল গঠন করেন; একই সুযোগ করে দেবে ফেসবুক। সাইটটির সামাজিক যোগাযোগ বৈশিষ্ট্য এক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে মনে করেন তিনি।
বর্তমানে ফেসবুকের ১০৬ কোটি গ্রাহকের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি সাইটটিতে গেম খেলে থাকেন। সংখ্যার হিসেবে গেমিং খাতের অন্যতম বড় স্থান হিসেবে তাই জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে সাইটটি। ফেসবুক আশা করছে, তাদের সাইটে গেমারদের হার আরো বাড়বে।
সেই সঙ্গে বাড়বে তাদের আয়ও। অবশ্য সর্বশেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) এ খাত থেকে ফেসবুকের আয় ২০১১ সালের একই সময়ের তুলনায় তেমন বাড়েনি।
গেম উন্নয়নকারীদের আয়ের ৩০ শতাংশ নিয়ে থাকে ফেসবুক। এসব ক্ষেত্রে বিনামূল্যে গেম খেলতে দিয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন গোলাবারুদ বা পাওয়ার বুস্টের মতো ভার্চুয়াল পণ্যের জন্য অর্থ দাবি করে থাকে গেমনির্মাতারা।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন